[ad_1]
‘তুমি দশজন কোটিপতির সাথে হাঁটো, একদিন দেখবা, ১১ নম্বর কোটিপতি হয়েছ তুমি!’
এক সহকর্মী তাঁর ফেসবুক পোস্টে এই লাইনটি লিখে খানিকটা ব্যঙ্গ করেছেন। তা দেখেই নজর কাড়ল। এরপর দেখি এটি তো বেশ ভাইরাল স্ট্যাটাসের ধরন! সবাই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে একই ভঙ্গিমায় নানা কথা লিখছেন। কেউ কোটিপতির সঙ্গে হাঁটতে বলছেন, তো কেউ বুদ্ধিজীবীর সঙ্গে। আবার কারও পরামর্শ হচ্ছে, সফল মানুষের সাথে হাঁটতেই হবে। তবেই সফল হওয়া কোনো ব্যাপারই না! কেউ কেউ মশকরাও অবশ্য করছেন। তাই গঞ্জিকা সেবনকারী বা হালের টিকটক সেলিব্রেটিদের সঙ্গে হাঁটার নিদানও মিলছে।
এক কথায়—পা আপনার, হাঁটার সিদ্ধান্তও আপনার। তবে কার সাথে হাঁটবেন, এই নিয়ে চলছে কড়চা। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের বর্তমানের এই ভাইরাল ট্রেন্ড মূলত বোঝায় যে, ‘সঙ্গদোষে লোহা ভাসে’ বা ‘সৎসঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎসঙ্গে সর্বনাশ’–এর মতো আমাদের সমাজে প্রচলিত ধারণাকেই। ওই পুরোনো জিনিসকে নতুন মোড়কে এনে কিছুটা চটকদার করে তোলা আর কি! খেয়াল করলে দেখবেন যে, পুরোনো জিনিসকে নতুন মোড়ক দেওয়ার বিষয়ে আমাদের জুড়ি মেলা ভার। এ কারণেই এ দেশে মোড়কজাতকরণের ব্যবসা রমরমা! প্যাকেট বানানো আমাদের জন্য কোনো বিষয়ই না। ঝামেলা হলো প্যাকেটের ভেতরের জিনিস বানানো। সেই হেতুই এ দেশ বা শহরের বিভিন্ন চিপায় নকল প্যাকেট বানানোর বহু দুই নম্বরি কারখানা পাব আমরা। কিন্তু আসল জিনিস বানানোর এক নম্বর কারখানা পাওয়া যাবে না।
এভাবেই একটি বহু পুরোনো প্রবাদ বা প্রবচনকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নতুন মোড়ক দিয়ে দিয়েছি আমরা। এখন চলছে জ্ঞান বিতরণ পর্ব। কেউ বলছেন, ‘তুমি দশজন উদ্যোক্তার সাথে হাঁটো, একদিন দেখবা, ১১ নম্বর উদ্যোক্তা হয়েছ তুমি!’ আবার কেউ বলছেন, ‘তুমি দশজন পাগলের সাথে হাঁটো, একদিন দেখবা, ১১ নম্বর পাগল হয়েছ তুমি!’ একই সুরে আপনি ছাগলও বসিয়ে নিতে পারেন। যত যা–ই বলুন, এ দেশে পাগল–ছাগলই তো বেশি! সুতরাং সেই উদাহরণ তো টানাই যায়।
এখন প্রশ্ন হলো—সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ছড়ানো উপরোক্ত আলাপে যে কিছু বিষয় স্পষ্ট করা হলো না, তাতে আমাদের ভবিষ্যৎ শঙ্কায় পড়ে যাবে কিনা! যেমন ধরুন, হাঁটতে বলা হয়েছে এসব নিদানে। কিন্তু কোন গতিতে হাঁটলে আসলে ব্লুটুথ বা ওয়াই–ফাই প্রযুক্তিতে সহজে পদব্রাজকের মধ্যে সাথের সঙ্গী বা সঙ্গীনীর গুণগুলো চলে আসবে, সেটি কিন্তু স্পষ্ট করা হয়নি। এখন হাঁটার গতি যদি বেশি বা কম হয়ে যায়, এবং গুণগুলো ১১ নম্বর হাঁটনেওয়ালার ব্লুটুথ বা ওয়াই–ফাই পোর্ট মিস করে ফেলে, তখন কী হবে? তখন তো হাঁটার কষ্টটাই সার হবে! এরপর দেখা গেল ১১ নম্বর হাঁটনেওয়ালা গালি দিতে দিতে গালির মেশিন বনে গেল! এভাবে কি একজন সম্ভাব্য কোটিপতি বা উদ্যোক্তা বা সেলিব্রেটিকে হারিয়ে ফেলবে না এই জাতি? ওই ক্ষতি পূরণ করবে কে, মার্ক জাকারবার্গ?
আবার ১০ জনের সঙ্গে হাঁটার ফরমুলাটিই একমাত্র কিনা, সেটিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দুনিয়ার বাংলাদেশ সংস্করণে নিশ্চিত করা হয়নি। প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, আমাকে কি ১০ জনের সঙ্গেই হাঁটতে হবে? ৯ বা ৫ জন হলেও কি হবে না? যদি প্রথম প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ হয়, তাহলে যে সমস্যাটি হতে পারে, সেটি হলো—১০ জন একই রকমের মানুষ খুঁজতে আমাদের পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে হতে পারে। এই বিজ্ঞাপন অবশ্য ডিজিটাল মাধ্যমেও দেওয়া যায়। তাতে হয়তো সাড়া বেশি পাওয়া যাবে। এ ধরনের আদম খোঁজার এজেন্সিও কোনো একজন দেশি উদ্যোক্তা খুলে বসতে পারেন চাইলে। কারণ ওতে ব্যবসা যে খারাপ হবে না, সেটি নিশ্চিত করেই বলা যায়। কারণ, হুজুগে হিসেবে বাঙালি তো পরিচিতই, নাকি!
ফাঁকতালে কিন্তু এ দেশের মানুষের স্বাস্থ্যগত উন্নয়ন হয়ে যাবে বেশ। ১০ জনের সাথে এত হাঁটলে শরীর ভালো না হয়ে যাবে কোথায়! দেখা গেল, দুই–তিন দফা হেঁটে, লাভ এলো না আপনার ব্লুটুথে। তখন স্বাভাবিকভাবেই আরও বেশি হাঁটতে হতে পারে। এই বিষয়টিও কিন্তু আমাদের ভাইরাল নেটিজেনরা এখনো স্পষ্ট করেননি। আসলে ১০ জন নির্দিষ্ট মানুষের সাথে কতক্ষণ হাঁটলে বেঙ্গলি হিউম্যান বডির ব্লুটুথ বা ওয়াই–ফাই পোর্ট সমৃদ্ধ হয়ে উপচে পড়বে, তার একটি বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা হওয়া খুবই প্রয়োজন। নইলে দেখা গেল, ১০ জন কোটিপতি মিলল, কয়েক ঘণ্টা হাঁটাও হলো, কিন্তু ১১ নম্বর হাঁটনেওয়ালার আর হাঁটা ছেড়ে গাড়িতে ওঠা হলো না! মানে অবস্থার উন্নতি আর হলো না। উল্টো হাঁটতে হাঁটতে পা আর স্যান্ডেল, দুই–ই গেল!
অর্থাৎ, এ দেশের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের ভাইরাল নেটিজেনদের আরও স্পষ্ট ও নির্দিষ্ট সমাধান দেওয়া অতীব প্রয়োজন। তাহলে দেশের কিছু মানুষের পাশাপাশি কোটি কোটি পাগল–ছাগলেরও দিন বদলে যাবে। বিশ্বের দেশে দেশে তখন ছড়িয়ে পড়বে ‘উন্মত্ত’ বাঙালি উদ্ভাবকদের নাম। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম হামলে পড়ে নিউজ–ভিডিও–শর্টস–রিলস বানাবে এই শিরোনামে—‘দশ জনের সাথে হাঁটলেই জীবন বদলে যায় যে দেশে!’
চোখ বন্ধ করে ভেবে দেখুন একবার। কী চমৎকার কাণ্ডটাই না হবে! আশা করি, এভাবে ভেবে দেখার পর বুঝ থাকলে আর চোখ খোলার ইচ্ছা আপনার হবে না। কষ্ট করে চোখ খুলে কী–ইবা দেখবেন ওই কষ্টের গেবনে। এর চেয়ে চোখ বন্ধ রাখবেন, নিরাপদেও হয়তো থাকতে পারবেন!
যাকগে যাক। অনেক পরামর্শ বিতরণ হলো। মোদ্দা কথা—পা আপনার, সিদ্ধান্তও আপনার। পায়ের পাশাপাশি নিজের মাথার নিয়ন্ত্রণও নেওয়ার চেষ্টা করে দেখতে পারেন। তাতে আর কিছু না হলেও, স্মার্টফোনের এমবি খরচ যে কম হবে—সেটি নিশ্চিত!
[ad_2]
সিদ্ধার্থ দাস! স্নাতক কোর্সের পর নিয়মিত লেখালেখি শুরু করেন।
17 বছরেরও বেশি সময় ধরে লেখক হিসাবে কাজ করছেন।
বর্তমানে রাজারহাট বার্তার সাব-এডিটর ও ক্রিয়েটিভ হেড হিসেবে কর্মরত।