চেলসির হ্যাজার্ড ছিলেন বিশ্বের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার। জাতীয় দলেও তখন তিনি বিধ্বংসী। ২০১৮ বিশ্বকাপে বেলজিয়ামের ফুটবল ইতিহাসের সেরা সাফল্য (তৃতীয়) তাঁর হাত ধরেই আসে। সেই দাপটে মজেই ১০০ মিলিয়ন পাউন্ডে এইডেন হ্যাজার্ডকে উড়িয়ে নিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ।
অথচ স্প্যানিশ জায়ান্টদের হয়ে চার বছরে মাত্র ৭৬ বার মাঠে নামতে পেরেছিলেন তিনি। সময়ের অন্যতম সেরা প্রতিভা গত অক্টোবরে মাত্র ৩৩ বছর বয়সে অবসরই নিয়ে ফেলেন! চেলসি সতীর্থ জন ওবি মাইকেলের সঙ্গে পোডকাস্টে এভাবে ফুটবল ছেড়ে দেওয়ার রহস্য খোলাসা করেছেন হ্যাজার্ড। ফিটনেস ও ফর্মহীনতায় ধুঁকতে ধুঁকতে তিনি নাকি ফুটবল খেলে আর মজা পাচ্ছিলেন না। তাই কঠিন সিদ্ধান্তটি নিতে খুব বেশি ভাবতে হয়নি তাঁকে।
চলতি মৌসুম শুরুর আগে হ্যাজার্ডকে রিলিজ করে দেওয়ার পর একটা গুজব ছড়িয়ে ছিল, মুটিয়ে যাওয়ার কারণেই নাকি রিয়াল মাদ্রিদ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পোডকাস্টে বিষয়টা স্বীকার করেছেন হ্যাজার্ড, ‘হ্যাঁ, সেটা সত্যি ছিল। কারণ, প্রতি গ্রীষ্মে আমি ৪-৫ কেজি ওজন বাড়িয়ে ফিরতাম। তখন আমি ভাবতাম, ১০ মাস অনেক খেটেছি, ছুটির সময়টা উপভোগ করতে হবে। তখন আমাকে কিছু করতে বলো না।
পরিবারের সঙ্গে আমি কেবল উপভোগ করতে চাই। সৈকতে গিয়ে বাচ্চাদের সঙ্গে ফুটবল খেলব। কিন্তু ওই তিন-চার সপ্তাহ আমাকে দৌড়াতে বলো না।’ মাইকেলকে তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, ‘আমার পুরো ক্যারিয়ারের দিকে তাকালে তুমি দেখবে মৌসুমের প্রথম মাসে আমার মনে হতো কেবল শুরু হলো। আমি মূলত উড়তে শুরু করতাম সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে। কারণ আমার মন ও শরীরকে সঠিক জায়গায় আনার জন্য আমার কিছুটা সময় লাগত। তাই এটা সত্য। আমি ৫ কেজি ওজন বাড়িয়ে ফিরতাম।’
ছুটির সময়ে পরিশ্রম না করার পাশাপাশি ইচ্ছামতো খাওয়া-দাওয়া করতেন বলেও অকপটে স্বীকার করেন হ্যাজার্ড, ‘পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সবকিছু করতে আমার ভালো লাগত। কেউ আমাকে কিছু খেতে বললে আমি না করতাম না। এমনকি আমি যা খেতে পছন্দ করি না, সেটাও খেয়ে সাবাড় করে দিতাম। একজন বেলজিয়ান হিসেবে বিয়ার আমি ভীষণ পছন্দ করি। বিশ্বের সেরা বিয়ার আমার দেশে উৎপাদন হয়। তাই বলে আমি প্রতিদিন বিয়ার পান করতাম না। তবে প্রায় একটা ভালো ম্যাচের পর দু-একটা পান করতে দারুণ লাগত।’
ওজন বাড়ানোর কথা স্বীকার করলেও হ্যাজার্ড দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, রিয়াল মাদ্রিদে এর চেয়ে ভালো করতে তিনি পারতেন না। রিয়ালে কেন তাঁর সময়টা খারাপ হয়েছে, সেটাও পরিষ্কার করেছেন তিনি।
এর পেছনে দায়ী করেছেন তিনি কভিডকে, ‘আমি আসলে দুর্ভাগা। করোনা মহামারির কবলে পড়ে গিয়েছিলাম আমি। গোড়ালিতে অস্ত্রোপচার করাতে আমি ডালাস গিয়েছিলাম। এরই মধ্যে শুরু হয়ে যায় কভিড। অনেক কষ্ট করে আমি তখন মাদ্রিদে ফিরে প্রায় আড়াই মাস বাড়িতে সম্পূর্ণ একা ছিলাম। রিহ্যাবের জন্য কোনো ফিজিও কিংবা ডাক্তার পর্যন্ত পাইনি। আমি একা একা রিহ্যাব করেছি। তখন সবাই ঘরবন্দি, কাজের জন্যও মানুষ রাস্তায় বের হতে পারে না। তাই আমি ফিজিও বা ডাক্তারকে বাড়ি আসতে জোর দিয়ে বলতেও পারতাম না। একসময় কভিড শেষ হলো। আমরা সবাই মাঠে ফিরলাম। তখন নিজেকে তৈরি করার জন্য শরীরের ওপর আমি বাড়তি চাপ দিয়ে বসলাম। কিন্তু আমার গোড়ালি তো আগের মতো ছিল না। অস্ত্রোপচারের পরপরই সঠিক রিহ্যাব করলে হয়তো গোড়ালি আগের মতো হতো। কিন্তু করোনার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি।’
ওই মৌসুমে লা লিগা জেতার দিনই নাকি তিনি কোচ জিনেদিন জিদানকে বলেছিলেন, তাঁর ফুটবল ক্যারিয়ার শেষ। ধীরে ধীর সেটাই হয়েছে।
সিদ্ধার্থ দাস! স্নাতক কোর্সের পর নিয়মিত লেখালেখি শুরু করেন।
17 বছরেরও বেশি সময় ধরে লেখক হিসাবে কাজ করছেন।
বর্তমানে রাজারহাট বার্তার সাব-এডিটর ও ক্রিয়েটিভ হেড হিসেবে কর্মরত।