একেই প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় (Prasenjit Chatterjee) ও ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত (Rituparna Sengupta) জুটির ৫০তম ছবি, তার উপর কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের (Kaushik Ganguli) পরিচালনা। সুতরাং ‘অযোগ্য’ ঘিরে প্রত্যাশা পারদ ছিল তুঙ্গে। বুম্বা-ঋতু জুটির পঞ্চাশতম ছবি- সেই অর্থে নিঃসন্দেহে একটি মাইলস্টোন। তবে এই ফিল্মটা শুধুমাত্র প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা জুটির। এতে কৌশিকের স্বাক্ষর তেমন পাওয়া গেল না। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি মানে টানটান গল্প। সেখানে গল্পের জন্যেই চরিত্রদের সৃষ্টি। কিন্তু ‘অযোগ্য’ যেন জুটির যোগ্যতা প্রমাণের প্রচেষ্টা। গল্প ছাপিয়ে এখানে নজর কেড়েছে প্রসেন-পর্ণার সম্পর্কের রসায়ন। আর যাঁকে আলাদা করে চোখে পড়ে- তিনি হলেন গায়ক-অভিনেতা শিলাজিৎ মজুমদার (Shulajit Majumder)। একেবারে শিক্ষিত, মধ্যবিত্ত এক চাকরিহারা গৃহকর্তার ভূমিকায় এর থেকে ভালো বিকল্প আর বোধহয় কেউ হতে পারতেন না।
শুক্রবার ছবির প্রিমিয়ার ছিল দক্ষিণ কলকাতার একটি অভিজাত শপিং মলের মাল্টিপ্লেক্সে। সপরিবারে হাজির ছিলেন পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। কারণ এটি তাঁদের প্রোডাকশনের প্রথম ছবি। সুতরাং প্রোডাকশনে যুক্ত ছিলেন তাঁর স্ত্রী অভিনেত্রী চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায় ও ছেলে অভিনেতা উজান। ছবি শুরুর প্রথমেই তাঁরা জানান, প্রথমদিন থেকেই হাউজফুল অযোগ্য। ফলে এই ছবি নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রত্যাশা বাড়ছে তাঁদের। ছবিটির প্রযোজক সুরিন্দর ফিল্মস। তার তরফ থেকে এদিন উপস্থিত ছিলেন নিসপাল-ঘরনী তথা জনপ্রিয় অভিনেত্রী কোয়েল মল্লিক। ফিল্ম (Film) তিনিও যথেষ্ট আশাবাদী। তাঁর কথায়, প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণার অন স্ক্রিন কেমিস্ট্রির জন্যেই হল মুখী হবেন দর্শক।
ছবি শুরুর প্রথমেই প্রসেনজিৎ জানান, এটা নিঃসন্দেহে বাংলা ছবির ইতিহাসে একটা মাইলস্টোন- যে সফল জুটির ৫০ তম ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে। এক অন্যরকম প্রেমের ছবিতে অভিনয় করতে পেরে উচ্ছ্বসিত অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তও। সংগীত পরিচালক অনুপম রায়। একটি গানও গেয়েছেন তিনি। ছবিতে আলাদাভাবে গান তেমন মাত্রা পায়নি।
ছবিতে প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণার সম্পর্কের টানাপোড়েনই মূল বিষয়। সেক্ষেত্রে ফ্ল্যাশব্যাকে একেবারে ছোটবেলা না দেখিয়ে তরুণ বয়সের পর্ণা, প্রসেনকে পর্দায় আনতে পারতেন পরিচালক। বিভিন্ন দৃশ্যে চমক দিতে চেয়েছেন কৌশিক। তবে শেষ পর্যন্ত তা তেমন দাগ কাটেনি। ‘অযোগ্য’তে অন্যভাবে দেখা মিলল লিলি চক্রবর্তীর। চরিত্র অনুযায়ী তিনি যথাযথ। অম্বরীশের উপস্থিতি যদিও খুব কম, তবে এই ধরনের চরিত্রে তিনি পুনর্ব্যবহৃত। অর্ধাঙ্গিনীতেও তাঁকে এর কাছাকাছি চরিত্রে দেখা গিয়েছিল। বরং সুদীপকে তাঁর চরিত্রে বেশ ভালো মানিয়েছে।নিজের ছবিতে সাধারণত অভিনয় করেন কৌশিক। কিন্তু এই ছবিতে তিনি অভিনেতা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন না।
ছবিতে রাজনীতি এসেছে ঠিকই তবে তার জোর খুব একটা নেই। ১৭ বছর আগে এক বাম নেতার অস্বাভাবিক মৃত্যু হলো অথচ তা নিয়ে কোনও তদন্ত হল না- এই বিষয়টা বাস্তবোচিত নয়। কেন ২০২৪-এ দাঁড়িয়েও একটি শহুরে শিক্ষিত পরিবারের মেয়ে পোলিও আক্রান্ত, তার ব্যাখ্যাও পাওয়া গেল না। শেষে চমক থাকলেও পুরো ছবির চিত্রনাট্যকে ব্যাকআপ দেওয়ার ক্ষমতা তার নেই। ফলে ছবি শেষ হওয়ার পরেও যে সত্যিই কে ‘অযোগ্য’ সেই প্রশ্নটা রয়েই গেল।