ভারতীয় উপমহাদেশের কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের ( Satyajit Ray ) প্রয়াণ দিবস ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল। তার কয়েকদিন আগে হৃদযন্ত্রের জটিলতা নিয়ে সত্যজিৎ ভর্তি হয়েছিলেন কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। ওই অবস্থা থেকে আর সুস্থ জীবনে ফিরে আসেননি। চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। মৃত্যুর কিছুদিন আগে অত্যন্ত অসুস্থ ও শয্যাশায়ী অবস্থায় সত্যজিৎ তাঁর জীবনের শেষ পুরস্কার হিসেবে একটি সম্মানসূচক অস্কার লাভ করেন। এর আগে তিনি কান চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছেন, ঝুলিতে রয়েছে ৩২টির মত জাতীয় পুরস্কার। পেয়েছেন গোল্ডেন লায়ন, ও সিলভার বিয়ার পুরস্কার। মহান এই পরিচালককে ১৯৮৫ সালে ভারতীয় চলচ্চিত্রের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দাদাসাহেব ফালকে। ১৯৯২ সালে ভারত সরকার তাঁকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ভারত রত্ন সম্মানে সম্মানিত করে।
কলকাতার গড়পারে ১৯২১ সালের ২ মে জন্ম হয় সত্যজিত্ রায়ের । শুধু চলচ্চিত্রে অবদানের জন্যই নয়, বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্যও সত্যজিৎ ছিলেন বিখ্যাত। তাঁর সৃষ্ট বিখ্যাত চরিত্র গোয়েন্দা ফেলুদা, বৈজ্ঞানিক প্রফেসর শঙ্কু ও তারিনীখুড়ো। এই তিনটি চরিত্র ছাড়াও অনেক ছোট উপন্যাস ও ছোট গল্প রচনা করেছেন তিনি। তাঁর লেখার মূল লক্ষ্য ছিল কিশোর-তরুণ। যদিও তিনি ছোট বড় সবার কাছেই প্রিয় লেখক ছিলেন। তবে, সত্যজিত বিশ্বের প্রশংসা কুড়িয়ে ছিলেন তাঁর চলচ্চিত্রের গুণে। চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে সত্যজিৎ ছিলেন বহুমুখী এবং তার কাজের পরিমাণ বিপুল। তিনি সারাজীবনে ৩৭টি পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনীচিত্র, প্রামাণ্যচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। তাঁর নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘পথের পাঁচালী’ ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাওয়া বেস্ট হিউম্যান ডকুমেন্টারির পুরস্কারও।
পথের পাঁচালী, অপরাজিত ও অপুর সংসার- এই তিনটি চলচ্চিত্রকে একত্রে ‘অপু ত্রয়ী’ বলা হয়। এই অপু-ট্রিলজি তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ হিসেবে আজও সমাদৃত। চলচ্চিত্র মাধ্যমে সত্যজিৎ চিত্রনাট্য রচনা, চরিত্রায়ন, সংগীত স্বরলিপি রচনা, চিত্র গ্রহণ, শিল্প নির্দেশনা, সম্পাদনা, সবেতেই নিজের প্রতিভার সাক্ষর রেখে গেছেন। যা তাঁর মৃত্যুর এত বছর পরেও চলচ্চিত্র শিক্ষার অন্যতম বিষয়বস্তু হিসেবে স্বীকৃত। দেশের বাইরে ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি তার অনেক চলচ্চিত্র বিষয়ক লেখা এবং ছোট গল্পের সংকলন পাশ্চাত্যেও প্রকাশিত হয়। এছাড়া সত্যজিতের অনেক গল্প ইংরেজিতে অনুদিত ও প্রকাশিত হয়েছে। এমন একজন কীর্তিমানের ৩২ বছর আগে দৈহিক মৃত্যু হলেও তিনি আজন্ম বেঁচে থাকবেন ভারত ও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র ও সাহিত্যের আঙিনায়। রয়ে যাবেন সবার হৃদয়ে, এক মহাপুরুষ হিসেবেই।
Bangla Jago
সিদ্ধার্থ দাস! স্নাতক কোর্সের পর নিয়মিত লেখালেখি শুরু করেন।
17 বছরেরও বেশি সময় ধরে লেখক হিসাবে কাজ করছেন।
বর্তমানে রাজারহাট বার্তার সাব-এডিটর ও ক্রিয়েটিভ হেড হিসেবে কর্মরত।